মিসওয়াক করার গুরুত্ব, ফযিলত ও পদ্ধতি
মিসওয়াক করার গুরুত্ব।
মিসওয়াক করার গুরুত্ব।
ইসলাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। অবাক করা ব্যাপার হল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাও ইবাদাতের একটি বিশেষ অংশ এবং ইবাদাত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে মুখ এবং দাঁতের গুরুত্ব অপরিসীম। মুখ পরিষ্কারের ব্যাপারে রাসূল সা: বলেন, “তোমারা মুখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখ ।” [বাযযার]
মুখ পরিষ্কার রাখার বড় মাধ্যম ও পন্থা হল দাঁত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা । যদি দাঁত পরিষ্কার না থাকে বা দাঁতে কোন প্রকার রোগ-ব্যাধি থাকে তবে তা দেখতে যেমন বিশ্রী তেমনি দুর্গন্ধও বের হয়।
ফলে অন্যের ইবাদাতের পাশাপাশি নিজের ইবাদাত নষ্ট হয়। আর দাঁতের সুরক্ষার নববী এবং সুন্নত হল মিসওয়াক করা। আজকের এই লেখায় মিসওয়াক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
মিসওয়াক কি?
মিসওয়াক শব্দটি ‘সিওয়াক’ ধাতু থেকে নির্গত যার অর্থ মাজা, ঘষা। মূলত গাছের ডাল বা শিকড়কে তথা যা দিয়ে দাঁত মাজা হয় তাকে মিসওয়াক বলে।
মিসওয়াক করার গুরুত্ব সম্পর্কিত হাদিস সমুহ।
١»عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ – وَفِي حَدِيثِ زُهَيْرٍ عَلَى أُمَّتِي – لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ ”
১।আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনদের জন্যে এবং যুহায়র-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, আমার উম্মাতের জন্য যদি কষ্টসাধ্য না হতো, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে প্রত্যেক সলাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
রেফারেন্সঃ-(ই.ফা. ৪৮০, ই.সে. ৪৯৬) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৭৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
٢»حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ حَدَّثَنَا ابْنُ بِشْرٍ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ شُرَيْحٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ قُلْتُ بِأَىِّ شَىْءٍ كَانَ يَبْدَأُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ قَالَتْ بِالسِّوَاكِ .
২।মিকদাম-এর পিতা শুরায়হ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে ঢুকে সর্বপ্রথম কোন্ কাজটি করতেন? তিনি বললেন, সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন।
রেফারেন্সঃ- (ই.ফা. ৪৮১, ই.সে. ৪৯৭) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৭৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
৩। হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,আমি তোমাদেরকে বেশী বেশী মিসওয়াক করার নির্দেশ দিচ্ছি।” [সহীহ বুখারী]
৪।হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা-কারী এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। [নাসাঈ শরীফ]
উপরে উল্লেখিত ৩টি হাদিসের মাধ্যমে সহজেই মিসওয়াকের গুরুত্ব অনুমেয়। মিসওয়াক করার ব্যাপারে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার বার এবং অনেক বেশী বেশী তাকীদ করেছেন। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিগত আমল ও ছিল মিসওয়াক করা যেমন:
৫।হযরত সুরাইহ ইবনে হানী (রা:) বলেন,
আমি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা:) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কি কাজ করতেন? তিনি জওয়াব দিলেন, সর্বপ্রথম তিনি মিসওয়াক করতেন। (রিয়াজুস স্বালেহীন)
এছাড়া ৬।হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রিবেলা সালাত আদায় করতে উঠলে মিসওয়াক দ্বারা আপন দাঁত মাজতেন। [সুনানে আন নাসায়ী-পবিত্রতা অধ্যায়]
মেসওয়াকের বৈঙানিক উপকারিতা।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” لاَ يَقْتَطِعُ رَجُلٌ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِينِهِ إِلاَّ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَأَوْجَبَ لَهُ النَّارَ ” . فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيرًا قَالَ ” وَإِنْ كَانَ سِوَاكًا مِنْ أَرَاكٍ ” .
আবূ উমামাহ আল-হারিসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তি অপর মুসলমানের প্রাপ্য স্বত্ব মিথ্যা শপথ করে কর্তন করে নিলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং জাহান্নাম তার জন্য অবধারিত করে দিবেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি তা সামান্য জিনিস হয়। তিনি বললেনঃ যদি তা পিলু গাছের একটি মেসওয়াকও হয়।
রেফারেন্সঃ-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৩২৪ মুসলিম ১৩৭, নাসায়ী ৫৪১৯, আহমাদ ২১৭৩৬, মুয়াত্তা মালেক ১৪৩৫, দারেমী ২৬০৩, রাওদুন নাদীর ২৪০।
তাহকীকঃ-হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
উক্ত হাদিসে তিনি আরাক বা পিলু গাছের কথা উল্লেখ করেছেন,তো চলুন এ গাছের বৈঙানিক রিসার্চ সম্পর্কে জেনে নেই।
আরাক বা পিলু গাছ : এই গাছটি ভারতের পাঞ্জাবের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়,বিশেষ করে লবণাক্ত ও বিরান ভুমিতে পাওয়া যায়। আরাক-পিলু গাছের আঁশ গুলো অত্যন্ত নরম এবং মসৃন হয়। রিসার্চ বলে এ গাছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম (Calcium) ও ফসফরাস (Phosphorus) নামক রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায়। যা আমাদের মানব দেহের জন্য অতিপ্রয়োজনীয়।এই গাছের মেসওয়াক তাজা ও নরম অবস্থায় চিবালে তার মধ্য থেকে এক ধরনের তিক্ত ও তেজস্ক্রিয় পদার্থ বেরিয়ে আসে। এই পদার্থ মুখের ভিতরের জীবাণুকে একেবারে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে বা প্রতিহত করে। এ গাছের আরও যেসব রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায় তা হলো-
(ট্রাইমিথাইল অ্যামিন Trimethyl Amine),
(সালভাডোরাইন Salvadorine), (অ্যালকালয়েড Alkaloid),
(ক্লোরাইড Chloride),
(ফ্লোরাইড Floride),(সিলিকা Sillica),
(গন্ধক Sulphur),(খাদ্যপ্রাণ সি Vitamin C),(ট্যানিন্স (Tanins) এবং (স্যাপোনিন্স Saponins),(ফ্লেভোনয়েডস Flavonoides) (স্টেরল্স Sterols),এবং রঞ্জক পদার্থ যেমন (Natural Pigments)ইত্যাদি।
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে যেটা অন্যান্য গাছ বা তার শিকর বা তার ঢাল এর সাথে সম্পৃক্ত,যা সামনে কোন গাছের মেসওয়াক ভালো বা ব্যবহার করা যাবে এই অধ্যায়ে আসবে।
কোন গাছের মেসওয়াক ভালো।
কোন গাছের মেসওয়াক ভালো বা কোন গাছ দিয়ে মেসওয়াক বানাবেন?
যে সকল গাছ বা তার ঢাল দিয়ে মেসওয়াক বানানো যায় তা নিন্মে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হাদিসে যে সকল গাছ বা তার ঢাল দিয়ে মেসওয়াক বানানোর/তৈরির কথা বলা হয়েছে।
১।যায়তুন গাছ
হযরত মুয়াজ (রাঃ), রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাম হতে বর্ণনা করেন, যায়তুন গাছের মিসওয়াক কতইনা উত্তম! এটা হচ্ছে পবিত্র বৃক্ষের অংশ যা মুখকে দূর্গন্ধমুক্ত ও মুখের ক্ষত দূর করে। এটা হচ্ছে আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের মিসওয়াক। (কানযুল উম্মাল তাবারানীর বরাতে, সূত্র : হাদিসে নূর ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃষ্ঠা নং ৪০)।
২।আরাক বা পিলু গাছ
হযরত আয়েশা (রাঃ)থেকে বর্নিতঃ-রাসুলুল্লাহ (সাঃ)আরাক বা পিলু গাছের মেসওয়াক ব্যবহার করতেন।
৩।খেজুর গাছের ঢাল।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খেজু গাছের ঢাল দিয়ে ও মেসওয়াক করতেন।
যায়তুন বা অন্যান্য বৃক্ষের মিসওয়াক হতে দ্রুত ফল পেতে হলে প্রতিদিন মিসওয়াকের নতুন আঁশ বের করে মিসওয়াক করতে হবে।
এছাড়া আরো যে সকল গাছ বা তার শিকর কিংবা তার ঢাল দিয়ে মেসওয়াক বানানো যাবে।
নিম গাছ : নিম গাছের মিসওয়াক ব্যবহারের উপকারিতা জানে না এমন মানুষ বাংলাদেশে পাওয়া দুষ্কর। নিম গাছের ডাল এ দেশের মানুষের উৎকৃষ্ট মিসওয়াক। নিম জাতীয় গাছকে বুতম বলা হয়। এ কথা সবারই জানা থাকার কথা যে, যে বাড়িতে একটা নিমের গাছ আছে সে বাড়ি কমপক্ষে দশ-বিশটি মতান্তরে ৭০টি রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে মুক্ত। আবার নিম গাছের ছায়াও স্বাস্থ্যকর। খোস পাঁচড়া, চুলকানী, অ্যালার্জিজনিত রোগ, বহুমূত্র, রক্তের বিকৃতি, কাশি, কৃমি, কুষ্ঠ, পিত্ত, ব্রণ, যকৃতের রোগ সহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এ গাছ ব্যবহৃত হয়। নিম গাছের মিসওয়াক ব্যবহার করলে অতি সহজেই এ থেকে কিছু উপকারীতা পাওয়া যায়। তাছাড়া নিমের গাছে থাকে তিক্ত রস যা মুখ দিয়ে চিবালে মুখের ভিতরের জীবাণুকে ধ্বংশ করে।
কানীর গাছ : কানীর গাছ অত্যন্ত তিতা স্বাদযুক্ত। কানীর গাছ দুই প্রকার। লাল ফুল ও সাদা ফুল যুক্ত। যে সব রুগীদের ‘পাইওরিয়া’ রোগে আক্রমণ করেছে তাদের এ গাছের মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করলে এ রোগ থেকে নিস্কৃতি পাওয়া যায়। ইহার স্বাদ তীব্র তিতা বলে মুখের ভিতরের জীবাণুকে ধ্বংশ করতে এ গাছের মিসওয়াক অতি ফলপ্রদ ভূমিকা পালন করে।
আকন্দ গাছ : আকন্দ গাছ তবে যাকে বানরের লাঠি বলি সে গাছ নয়। এ গাছ দাঁতের ব্যথা, সর্দিকাশি, চর্মরোগ, জন্ডিস প্রভৃতি রোগে কাজ দেয়। ফলে এ গাছের মিসওয়াক ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বাবলা : বাবলা গাছ আমাদের অতি পরিচিত। তবে মিসওয়াক হিসাবে অতটা নয়। বাবলা গাছের ডাল দাঁতের ফাঁকের জমাট বাধা ময়লা সহজেই তুলে আনতে পারে।
অর্জুন : অর্জুন গাছ বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পাওয়া যায়। মিসওয়াকের মাধ্যমে এই গাছের যে সব উপকার পাওয়া যায় তা হল যক্ষা বা ক্ষয়কাশ, প্রস্রাব বন্ধে, রক্ত আমাশয়ে, রক্তপিত্তে, লো-ব্লাডপ্রেসারে ইত্যাদি। তাছাড়া হৃদরোগের টনিক তৈরিতে এ গাছ ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এ গাছের মিসওয়াক ব্যবহারে হৃদরোগের উপকার পাওয়া যাবে। তবে যাদের হাই ব্লাডপ্রেসার, হজমে গোলমাল আছে তাদের জন্য এ গাছের রস সরাসরি গ্রহণ করা যাবেনা। তবে মিসওয়াক করলে অসুবিধা নেই।
ডালিম গাছ : ডালিম শক্তিশালী সংকোচক এবং কৃমিনাশক। এ ছাড়া এ গাছের মিসওয়াক ব্যবহারে নিম্মোক্ত রোগসমূহে উপকার পাওয়া যেতে পারে যথা-অজীর্ণ, আমাশয়, নারীদের প্রায়ই গর্ভস্রাব হলে, হৃদরোগ, অনিদ্রা ইত্যাদি।
লেবু গাছ : যে সব রোগে উপকার দেবে- গোঁড়া লেবুর গাছ থেকে- কফ, বমি বমি ভাব, মুখে রসের অভাব, বাতাবী লেবুর গাছ থেকে- উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎপিন্ড রোগ, বদ হজম ইত্যাদি।
আম গাছ : আম গাছের মিসওয়াক ব্যবহার করলে বমি বমি ভাব দূর হতে পারে। ইহা প্লিহা রোগে ভূমিকা রাখতে পারে। আম গাছের মিসওয়াক ব্যবহারকে মাকরূহ বা হয়ে থাকে।
বেল গাছ : বেল গাছ এর মিসওয়াক ব্যবহার করলে যাদের বমি বমি ভাব হয় তাদের উপকার হবে। তা ছাড়া কফ ও বায়ু রোগে উপকার দেয়। এটি বাতের রুগীদের উপকার করবে।
আটেশ্বরী বা শুঠি : এ গাছ ছোট আকৃতির হয়। সাধারণত রাস্তার ধারে হয়। এ গাছের মিসওয়াক ব্যবহারে দাঁতের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। দাঁতের উপর চকচকে এক ধরণের প্রলেপ পড়ে যা দাঁতকে সুন্দর দেখায়।
আম গাছের ডাল, বাঁশের কঞ্চি বা বাঁশ, ফুলের গাছ, ক্ষতিকর বা কষ্টদায়ক কোন গাছ বা বস্তু দ্বারা মিসওয়াক করা মাকরূহ। বিষাক্ত কোন কিছু দ্বারা মিসওয়াক করা হারাম। মিসওয়াক থেকে দ্রুত এবং বেশি উপকার পেতে চাইলে কবরস্থান বা গোরস্থানে অবস্থিত প্রয়োজনীয় গাছ থেকে মিসওয়াক করতে হবে। কেননা সেখান গাছে মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে।
মেসওয়াক করার ফজিলত,
রাসুলুল্লাহ সাঃ মেসওয়াক করার অনেক গুনাগুন হাদিসে পাকে এরশাদ করেছেন,এবং বর্তমান চিকিৎসা বিঙান ও এর উপকারিতার কথা শিকার করেছেন।তথাপি মেসওয়াক করার কিছু ফজিলত বর্ননা করতেছি,সেই সাথে তার হাদিস গুলো ও তোলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
১.মিসওয়াকের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
২.মিসওয়াকের মাধ্যমে মুখের পবিত্রতা অর্জিত হয়।
হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা-কারী এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।
৩.মিসওয়াক করা সকল নবীদের সুন্নত।
وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِينَ الْحَيَاءُ وَيُرْوَى الخِتَانُ وَالتَّعَطُّرُ وَالسِّوَاكُ وَالنِّكَاحُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
আবূ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : চারটি বিষয় নাবী রসূলদের সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত- (১) লজ্জাশীলতা, আর এক বর্ণনায় এর স্থলে খতনার কথা বলা হয়েছে; (২) সুগন্ধি ব্যবহার করা; (৩) মিসওয়াক করা এবং (৪) বিয়ে করা। [১]
নোট: [১] য‘ঈফ : তিরমিযী ১০৮০, ইরওয়া ৩৩, সিলসিলা য‘ঈফাহ্ ৪৫২৩। কারণ এর সানাদে ‘‘আবুশ শিমাল’’ নামক একজন অপরিচিত রাবী রয়েছে।মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৩৮২
হাদিসের মান: দুর্বল হাদিস
৪.মিসওয়াক করে সালাত আদায় করলে ৭০ গুন বেশী সওয়াব পাওয়া যায়।
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে সলাতের জন্য (উযূ করার সময়) মিসওয়াক করা হয় তার ফজিলত সত্তর গুন বেশি সে সলাতের চেয়ে যে সলাতে মিসওয়াক করা হয়নি।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৩৮৯
হাদিসের মান: দুর্বল হাদিস
৫.দাঁত মজবুত হয় ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
৬.মাথার ব্যথা ও কাশি দূর হয়।
৭.পাকস্থলী এবং শরীর শক্তিশালী হয়।
৮.চোখের জোতি বৃদ্ধি পায়।
৯.মিসওয়াক পুরুষের দায়েমী সুন্নতের একটি।
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দশটি বিষয় ফিত্বরাহ্ অর্থাৎ প্রকৃতিগত স্বভাবের অন্তর্গত। (১) গোঁফ খাটো করা, (২) দাড়ি লম্বা করা, (৩) মিসওয়াক করা, (৪) পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, (৫) নখ কাটা,(৬) আঙ্গুলের গিরাগুলো ধোয়া, (৭) বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা, (৮) গুপ্তাঙ্গের লোম কাটা, (৯) শৌচকাজ করা (পবিত্র থাকা) এবং রাবী বলেন, দশমটা আমি ভুলে গেছি, সম্ভবত তা ‘কুলি করা’।
অপর এক বর্ণনায় (দ্বিতীয় জিনিসটি) দাড়ি বাড়াবার স্থলে খতনা করার কথা এসেছে। মিশকাতের সংকলক বলেন, এ বর্ণনাটি বুখারী-মুসলিমে আমি পাইনি, আর হুমায়দীতেও নেই (যা সহীহায়নের জামি’)। অবশ্য এ রিওয়ায়াতকে জামিউস সগীরে উল্লেখ করেছেন। এভাবে খাত্ত্বাবী (রহঃ) মা’আলিমুস সুনানে বর্ণনা করেছেন। সহীহ : মুসলিম ২৬১।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৩৭৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
১০.মুখের জড়তা দুর হয়।
১১.মুখের দুর্গন্দ্ব দুর হয়।
১২.মুখের ভিতরের ক্ষত স্থান খুব দ্রুত পুরন হয়।
১৩.মুখের ভিতরের জীবানুকে মেরে ফেলে।
১৪.জ্বিহ্বার জড়তা দুর করে।
১৫.খাবারের রুচি বাড়ায়।ইত্যাদি
মেসওয়াক করার নিয়ম বা পদ্ধতি।
১।মিসওয়াক নির্বাচন ও ধরণ
যেসব গাছের ডাল তিতা সেসব ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। মিসওয়াক নরম, হাতের আঙ্গুলের মত মোটা হওয়া এবং এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। যায়তুনের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম।
২।মেসওয়াক করার নিয়ম
মিসওয়াকের নিচে ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল আর মিসওয়াকের উপরে মধ্যমা ও তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা এর মাথার নিচ ভালভাবে ধরা এভাবে মিসওয়াক করা
হযরত ইব্ন মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত রয়েছে। মিসওয়াক করার পূর্বে মিসওয়াক পানিতে ভিজিয়ে নেয়া জরুরি এবং উত্তম। মিসওয়াক করার সঠিক নিয়ম হল, মুখের ডানদিক থেকে শুরু করা এবং দাঁতের প্রস্থের দিক থেকে মিসওয়াক করা, দৈর্ঘ্যের দিক থেকে নয়।
প্রথমত উপরের দাঁতের ডান দিক তারপর উপরের দাঁতের বাম দিক। উপরের দাঁত মিসওয়াক করার পর নীচের দাঁতের ডান দিকে তারপর নিচের দাঁতের বাম দিকে। এবং শেষে দাঁতের ভিতরের দিকে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে মাজতে হবে।
উপরে উল্লেখিত প্রতিটি কাজ তিনবার করে করা উত্তম। প্রত্যেক বার মাজার পূর্বে মিসওয়াক ধুয়ে নেয়া মোস্তাহাব।মিসওয়াক করা শেষ হলে তা ধুয়ে দাড় করিয়ে রাখা উচিত।
৩।যে অবস্থায় মেসওয়াক করা নিষেধ।
১.শুয়ে থাকা অবস্থায় মিসওয়াক করা মাকরূহ তাই তা পরিহার করা উচিত।
২.বাথরুমে বা প্রস্রাব খানায় বসে বসে মেসওয়াক করা সম্পুর্ন নিষেধ।
৩.ইস্তিঞ্জার সময়,তথা প্রস্রাবের পর প্রস্রাব খানায় বসে বসে কিংবা চল্লিশ কদম পায়চারি করার সময় মিসওয়াক করা নিষেধ।
৪.লোক সমাগমের মজলিসে মেসওয়াক করা মাকরুহ।
৫.নামাজে থাকা অবস্থায় মিসওয়াক করা নিষেধ।এতে নামাজ ভেঙে যায়।কারণ আমলে কাছীর পাওয়া যায়।
৬.কোরআন তেলাওয়াত কিংবা জিকির আযকার করা অবস্থায় মেসওয়াক করা মাকরুহ।
৭.খাবার খাওয়া অবস্থায় মিসওয়াক করা নিষেধ।
৪। মেসওয়াক কখন করবে।
মিসওয়াক কখন করবে এ নিয়ে উলামায়ে কেরাম অনেক গুলি মতামত করেছেন।
১.অযুতে কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করার কথা বলেছেন।
২.তবে আবার কেউ কেউ বলেছেন অজুর পূর্বে মিসওয়াক করার কথা।
৩. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর মেসওয়াক করা।
৪.ঘুমাতে যাওয়ার আগে মিসওয়াক করা। ৫.নামাযের আগে মেসওয়াক করা।
৬.মজলিসে যাওয়ার পূর্বে মিসওয়াক করা।
৭এবং কুরআন ও হাদিস তিলাওয়াত করার পূর্বে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।
মিসওয়াক করার সুন্নাত কয়টি ও কি কি?
মেসওয়াকের সুন্নত সমূহঃ
১.প্রথমে বিসমিল্লাহ ও দোয়া পড়বে,
২.তারপর মিসওয়াক টাকে একটু ভিজিয়ে নরম করে নেবে,
৩.অতঃপর ডান হাত দ্বারা মেসওয়াক করা,৪.মুখের চোয়ালের ডান পাস থেকে মেসওয়াক শুরু করা,
৫.মেসওয়াক লম্বালম্বি ভাবে না করা(তথা ডান দিক থেকে বাম দিক)এমন না করা,
৬.উপরের দাত ও নিচের দাত মিলিয়ে মেসওয়াক করা,
৭.অন্তত তিনবার দাতগুলো মাঝবে,
৮.জ্বিহবার উপরে ও একটু মেঝে নেবে,
৯.এবং শেষে দাতের ভিতরের অংশও মাঝবে,
১০.তারপর মিসওয়াক টি ধুয়ে দার করিয়ে রাখবে।
মিসওয়াক করার দোয়া।
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর থেকে মেসওয়াক করার কোন নির্দারিত দোয়া পাওয়া যায়নি,তবে উলামায়ে কেরামগন এই দোয়া পড়তে বলে থাকেন যে প্রত্যেক কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করবে। অতঃপর উক্ত দোয়াটি পাঠ করবে,
দোয়াটি এই,মিসওয়াক করার দোয়া।
اللهمّ اجعل هذا السواك تكفيراً لذنوبي وعلامةً لفضلك، وجميل وجهي كما حسنت أسناني.
উচ্চারণঃ-আল্লাহুম্মাজ আ’ল হা’জাস সিওয়াকি তাকফিরান লিজুনুবী ওয়ালামাতান লিফাদ্বলিক,ওয়াজামীলুন ওয়াজহিয়া কামা হাস্সানতা আসনানী।
অর্থঃ-হে আল্লাহ এই মেসওয়াক করাকে আমার পাপ মোচনকারী ও আপনার সন্তুষ্টির ওছিলা বানান ।আর আমার দাঁতগুলিকে যেমনি আপনি সুন্দর করেছেন, তেমনি আমার চেহারা টাকে ও উজ্জল(সুন্দর) করুন ।
সূত্র আহকামে যিন্দেগী ১৩৬ পৃঃ ।
নবিজি দিনে কতবার মেসওয়াক করতেন।
রাসুলুল্লাহ সাঃ দৈনিক কতবার মেসওয়াক করতেন তার কোন নির্দিষ্টতা ছিলনা তবে হাদিস সমুহ পর্যালোচনা করে যা পাওয়া যায়,তা হলো তিনি দিনে অনেক বেশি মিসওয়াক করতেন,এবং সাহাবায়ে কেরামকে ও মেসওয়াক করতে আদেশ করতেন।
বেশি মেসওয়াক করার ব্যাপারে হাদিস সমুহ।
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ.
হুযায়ফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতে (সালাতের জন্য) উঠতেন তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন।
রেফারেন্সঃ-(৮৮৯, ১১৩৬; মুসলিম ২/১৫, হাঃ ২৫৫, আহমাদ ২৩৪৭৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৪৪)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখনই জিবরীল (আঃ) আমার নিকট আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য বলতেন, যাতে আমার ভয় হতে লাগলো যে, আমি আমার মুখের সম্মুখ দিক ক্ষয় করে দিব।
রেফারেন্সঃ-আহমাদ হা/২২৩২৩; মিশকাত হা/৩৮৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৬, ২/৭৫।
وَعَنْ عَامِرِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِىَّ ﷺ مَا لَا أُحْصِىْ يَتَسَوَّكُ وَهُوَ صَائِمٌ. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُو دَاوُدَ
আমির ইবনু রবী‘আহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সওম অবস্থায় এতবার মিসওয়াক করতে দেখেছি যে, তা আমি হিসাব করতে পারি না। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)
রেফারেন্স : আবূ দাঊদ ২৩৬২, তিরমিযী ৭২৫, আহমাদ ১৫৬৭৪, দারাকুত্বনী ২৩৬৮, ইরওয়া ৬৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৩২৫।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ২০০৯
উপরোক্ত হাদিস সমুহ থেকে বুঝা যায় রাসুলুল্লাহ সাঃ সর্বদায়ই মেসওয়াক করতেন,তিনি যখন কিংবা নামায পরতেন কিংবা মুখ পরিষ্কার করতেন,বা যদি কোন কিছু খেতেন, তাহলে তিনি মেসওয়াক করতেন।
নবিজি (সাঃ) কোন গাছের মেসওয়াক ব্যবহার করতেন।
হাদিস সমুহ পর্যালোচনা করে যা জানা যায় রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মেসওয়াক, যায়তুন,আরাক বা পিলু,এবং খেজুর গাছের ডাল ও ছিলো।
যেমন,
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ كَثِيرٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّهُ سَمِعَ أَخَاهُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ كَعْبٍ، أَنَّ أَبَا أُمَامَةَ الْحَارِثِيَّ، حَدَّثَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” لاَ يَقْتَطِعُ رَجُلٌ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِينِهِ إِلاَّ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَأَوْجَبَ لَهُ النَّارَ ” . فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيرًا قَالَ ” وَإِنْ كَانَ سِوَاكًا مِنْ أَرَاكٍ ” .
আবূ উমামাহ আল-হারিসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তি অপর মুসলমানের প্রাপ্য স্বত্ব মিথ্যা শপথ করে কর্তন করে নিলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং জাহান্নাম তার জন্য অবধারিত করে দিবেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি তা সামান্য জিনিস হয়। তিনি বললেনঃ যদি তা পিলু গাছের একটি মেসওয়াক ও হয়।
রেফারেন্সঃ- সুনানে ইবনে মাজাহ [২৩২৪] মুসলিম ১৩৭, নাসায়ী ৫৪১৯, আহমাদ ২১৭৩৬, মুয়াত্তা মালেক ১৪৩৫, দারেমী ২৬০৩, রাওদুন নাদীর ২৪০।
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
হযরত মুয়াজ (রাঃ), রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাম হতে বর্ণনা করেন, যায়তুন গাছের মিসওয়াক কতইনা উত্তম! এটা হচ্ছে পবিত্র বৃক্ষের অংশ যা মুখকে দূর্গন্ধমুক্ত ও মুখের ক্ষত দূর করে। এটা হচ্ছে আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের মিসওয়াক। (কানযুল উম্মাল তাবারানীর বরাতে, সূত্র : হাদিসে নূর ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃষ্ঠা নং ৪০)।
মেসওয়াক তৈরির নিয়ম।
মিসওয়াক তৈরি করার ক্ষেত্রে সর্ব প্রথম উপরে উল্লেখিত যে সকল গাছ বা তার ঢাল ব্যাবহার করার বলা হয়েছে সেগুলো থেকে কোন একটা ঢাল বা তার শিকড় কিংবা ঐ গাছ থেকে হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের মত মোটা এবং লম্বায় এক বিগাত পরিমান কেটে নেবে পরে সেটাকে ভালোভাবে পরিস্কার করে ধৌত করে নেবে,
তারপর সেটার এক মাথা যেদিক দিয়ে মেসওয়াক করবে ঐ স্থান টাকে একটু ছেচে পরিস্কার করে নেবে।
তারপর দাত দিয়ে কামড়িয়ে ঐ স্থানকে নরম করবে এবং মেসওয়াক করবে।
মেসওয়াক সন্ক্রান্ত হাদিস সমুহ।
উল্লেখিত পোস্টে মিসওয়াক সন্ক্রান্ত হাদিস,
১.রাসূল সা: বলেন, “তোমারা মুখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখ ।” [বাযযার]
২.আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনদের জন্যে এবং যুহায়র-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, আমার উম্মাতের জন্য যদি কষ্টসাধ্য না হতো, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে প্রত্যেক সলাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
৩.মিকদাম-এর পিতা শুরায়হ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে ঢুকে সর্বপ্রথম কোন্ কাজটি করতেন? তিনি বললেন, সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন।
৪.হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,আমি তোমাদেরকে বেশী বেশী মিসওয়াক করার নির্দেশ দিচ্ছি।
৫.হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা-কারী এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।
৬.হযরত সুরাইহ ইবনে হানী (রা:) বলেন,
আমি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা:) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কি কাজ করতেন? তিনি জওয়াব দিলেন, সর্বপ্রথম তিনি মিসওয়াক করতেন।
৭.হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রিবেলা সালাত আদায় করতে উঠলে মিসওয়াক দ্বারা আপন দাঁত মাজতেন।
৮.আবূ উমামাহ আল-হারিসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তি অপর মুসলমানের প্রাপ্য স্বত্ব মিথ্যা শপথ করে কর্তন করে নিলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং জাহান্নাম তার জন্য অবধারিত করে দিবেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি তা সামান্য জিনিস হয়। তিনি বললেনঃ যদি তা পিলু গাছের একটি মেসওয়াকও হয়।
৯.হযরত মুয়াজ (রাঃ), রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাম হতে বর্ণনা করেন, যায়তুন গাছের মিসওয়াক কতইনা উত্তম! এটা হচ্ছে পবিত্র বৃক্ষের অংশ যা মুখকে দূর্গন্ধমুক্ত ও মুখের ক্ষত দূর করে। এটা হচ্ছে আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের মিসওয়াক।
১০.হযরত আয়েশা (রাঃ)থেকে বর্নিতঃ-রাসুলুল্লাহ (সাঃ)আরাক বা পিলু গাছের মেসওয়াক ব্যবহার করতেন।
১১.আবূ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : চারটি বিষয় নাবী রসূলদের সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত- (১) লজ্জাশীলতা, আর এক বর্ণনায় এর স্থলে খতনার কথা বলা হয়েছে; (২) সুগন্ধি ব্যবহার করা; (৩) মিসওয়াক করা এবং (৪) বিয়ে করা।
১২.আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে সলাতের জন্য (উযূ করার সময়) মিসওয়াক করা হয় তার ফজিলত সত্তর গুন বেশি সে সলাতের চেয়ে যে সলাতে মিসওয়াক করা হয়নি।
১৩.আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দশটি বিষয় ফিত্বরাহ্ অর্থাৎ প্রকৃতিগত স্বভাবের অন্তর্গত। (১) গোঁফ খাটো করা, (২) দাড়ি লম্বা করা, (৩) মিসওয়াক করা, (৪) পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, (৫) নখ কাটা,(৬) আঙ্গুলের গিরাগুলো ধোয়া, (৭) বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা, (৮) গুপ্তাঙ্গের লোম কাটা, (৯) শৌচকাজ করা (পবিত্র থাকা) এবং রাবী বলেন, দশমটা আমি ভুলে গেছি, সম্ভবত তা ‘কুলি করা’।
১৪.হুযায়ফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতে (সালাতের জন্য) উঠতেন তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন।
১৫.রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখনই জিবরীল (আঃ) আমার নিকট আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য বলতেন, যাতে আমার ভয় হতে লাগলো যে, আমি আমার মুখের সম্মুখ দিক ক্ষয় করে দিব।
১৬.আমির ইবনু রবী‘আহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সওম অবস্থায় এতবার মিসওয়াক করতে দেখেছি যে, তা আমি হিসাব করতে পারি না।
এছাড়াও আরো অনেক হাদিস রয়েছে যা হাদিসের বড় বড় কিতাবে উল্লেখিত।
বিঃদ্রঃ যদি কোন ভুল পরিলক্ষিত হয় তাহলে দয়া করে আমাদেরকে অবহিত করবেন,এতে আমরা ও অনেক দ্বীনি ভাই সেই ভুল থেকে বাচতে পারবেন।
আল্লাহ তা’য়ালা সকলকে সুন্নাহভিত্তিক জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন।আমিন।