পর্নোগ্রাফি আসক্তি থেকে বাঁচার উপায়ঃ (পর্ব ১)
পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়: নিষিদ্ধ জিনিসে বরাবরই মানুষের আগ্রহ একটু বেশি। সমাজের সার্বিক অবক্ষয়ের পেছনে যে বিষয়গুলো দায়ী সেগুলোতেই মানুষের তীব্র আসক্তি, যা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যেই পড়ে। মাদকাসক্তি, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, নারী ও শিশু নির্যাতন, পর্ন আসক্তি প্রভৃতি বিষয়গুলো সমাজের অবক্ষয়ের কারণ। বর্তমান সমাজে পর্ণ আসক্তি (Porn Addiction) একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধির নাম। সমাজে এটি এতটায় তীব্র আকার ধারণ করছে যেটিতে লাগাম টানা অতীব জরুরি নতুবা এই ভয়াবহ ব্যাধি একদিন গোটা সমাজের ধ্বংসের কারণ হবে।
ব্যক্তিজীবনের ঘোর কালো অমানিশার অন্ধকারের আরেক নাম পর্ণাসক্তি
পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন বা হস্তমৈথুনে আসক্ত হয়ে অনেক ভাই-বোনের জীবন আজ বিষন্ন হয়ে গেছে। তিলে তিলে নিজেকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এখন উপলব্ধি করতে পারছে; জীবনে কী ক্ষতিটাই না করলাম। একটু সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের আশায় কত চেষ্টায় না তারা করছে। কিন্তু তারা যে মাদকাসক্তের চেয়েও ভয়ঙ্কর এক নেশায় আসক্ত। চাইলেও অনেকে এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না শুধুমাত্র সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে।
আজকের এই দীর্ঘ লেখা জুড়ে আলোচনা করা হবে মানুষ কেন পর্ণাসক্ত হয়, পর্নোগ্রাফির নেতিবাচক প্রভাব এবং এই নীল জগত থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যাবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। ধৈর্য্য ধরে সম্পুর্ন পোস্ট টি পড়ে শেষ করুন। হয়তো পর্ণাসক্ত থেকে পুরো পুরি মুক্তি পাবেন নতুবা সতর্ক হবেন এই ঘোর কালো অন্ধকার জগত থেকে।
একজন ব্যক্তি যখন পর্ন দেখা শুরু করেন তখন তিনি এটিকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নেন এবং যখন দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়া যখন চলতে থাকে তখন ব্যক্তি এই পর্নোগ্রাফির প্রভাবকেই স্বাভাবিক বলে মনে করা শুরু করে। বিষয়গুলো ব্যক্তি তার নিজের যৌন জীবনে পেতে চান এবং সেটি না পেলেও মনে মনে তার জীবনসঙ্গীর সাথে তুলনা শুরু করেন। যার প্রভাবে যৌন জীবন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং পর্ণের কারণেই মূলত মানুষের ব্রেনে Neurochemical – নিউরো কেমিক্যাল পরিবর্তন আসে। এর ফলে হতাশা, বিষন্নতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। ফলে ঐ ব্যক্তি যখন সুযোগ পায় বা একা থাকে, সে তখন বারবার পর্ন দেখে যা তার অভ্যাস হয়ে যায়। আর এই অভ্যাসটিই একসময় আসক্তিতে রূপান্তরিত হয় যার নাম পর্নোগ্রাফি আসক্তি (Pornography Addiction) বা পর্ণ আসক্তি (Porn Addiction)।
Dr. Harry Fish – ড. হ্যারি ফিশ বলেছিলেন- “পর্নাসক্তি হলো সেই কালপ্রিট যা আপনার যৌনজীবনের বারোটা বাজিয়ে দেবে”
শুধুমাত্র পুরুষ ও ছেলেরাই নয় বর্তমান সমাজে নারী ও মেয়ে এমনকি ছোট শিশুদের মধ্যেও পর্নোগ্রাফি আসক্তি চলে এসেছে৷ সমাজে যা খুবই ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে।
২০১৯ সালে একটি বিশেষ গবেষণায় জানা গিয়েছে, বর্তমান ১৩-১৯ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ৫৩% শতাংশ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। বর্তমানে সারাবিশ্বে যত ভিডিও ডাউনলোড করা হয় তার ৩৫% শতাংশ ভিডিও পর্নোগ্রাফির।
একজন সাধারণ আমেরিকানের প্রত্যাশিত আয়ুষ্ক্যাল ৭৮.৬ বছর কিন্তু একজন পর্ন অভিনেতার প্রত্যাশিত আয়ুষ্ক্যাল হলো ৩৬.২ বছর।
২০০৩-২০০৪ সালের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ১৫০০ কর্মীর মধ্যে ২২৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ এইডস্, আত্মহত্যা ও মাদক সেবন।
২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একটি ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম (E.E.G) মস্তিষ্কের কার্যকলাপের পরিবর্তন সনাক্ত করতে পারে। বিশেষ করে, P300 নামে একটি প্রতিক্রিয়াশীল ঘটনা। পর্নোগ্রাফি দেখার ৩০০ মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই এই প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। গবেষণায় যুক্তি দেখানো হয় যে, একই প্রতিক্রিয়া ঘটে যখন একজন মাদকাসক্ত মাদক গ্রহণ করে।
নিচে পর্নোগ্রাফির নেতিবাচক প্রভাবগুলো তুলে ধরা হলো:
পর্ণ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে।
পর্ন আসক্তি (Porn Addiction) মানুষের বৈবাহিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে ফলে সংসারে অশান্তি ও দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। এতে সংসার ও সম্পর্কের অবনতি হয়।
পর্নোগ্রাফি আসক্তি জীবনের গুরুত্বকে মলিন করে দেয়।
পর্ন আসক্ত ব্যক্তি জীবনের দায়িত্বগুলোকে সবসময় এড়িয়ে চলে কারণ এগুলোর কোনো মূল্য তার কাছে নেই। ফলে শুরু করেন দায়িত্বে অবহেলা।
পর্ণে আসক্ত ব্যক্তির মধ্যে নেতিবাচক আচরণ ও আচরণগত পরিবর্তন আসে। পর্ণ আসক্ত ব্যক্তি অনেকটায় বাধ্য হয়ে বারবার পর্ণ দেখে থাকে।
ব্যক্তি নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করেন পর্ন ভিডিও দেখে দেখে। যা তার জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করার সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ কাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামজিক জীবনের পাশাপাশি পর্ণ আসক্ত ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক দিকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অতিরিক্ত পর্ণ আসক্তি সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হতে পারে।
আমাদের অনেকেরই অনেক সময় নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা সৃস্টি হয়, তৈরী হয় বিষন্নতা।
একটা সময়ে পর্ন আসক্ত ব্যক্তি বিকৃত মানসিকতার হয়ে ওঠে। কারণ এটি আপনাকে যৌন বিকৃতি শেখাবে। এই বিকৃত যৌনাচারের ফলে আপনার জীবনসঙ্গী এইচআইভি, মলাশয়ের ক্যান্সার, হারপিস, গণোরিয়া, সিলিফিস, ক্ল্যামিডিয়া, গলার ক্যান্সার, হেপাটাইটিস এর মতো ভয়ঙ্কর রোগের শিকার হতে পারে।
বর্তমানে মেয়েরা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশে স্কুলগামী কিশোরদের মধ্যে যারা পর্নে আসক্ত তাদের ৭০.৫৫% শারীরিকভাবে মেয়েদের উত্যক্ত করতে চায়।
ছেলে-মেয়ে উভয়ই বডিশেমিং এর স্বীকার হচ্ছে।
সমাজে ধর্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে যারা পর্ন আসক্ত তারা সবাই ধর্ষক নয় কিন্তু যারা ধর্ষক, সিরিয়াল কিলার, শিশু যৌন নির্যাতক, সমকামী তারা সবাই পর্ন আসক্ত।
কাজ-কর্মে মনোনিবেশ না করার কারণে একসময় তার ক্যারিয়ার ধ্বংসের মুখে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে ব্যক্তির আর্থিক অবস্থায়।