পর্নগ্রাফি আসক্তি থেকে বাঁচার উপায়ঃ ( পর্ব ২)

Photo of author

By Ummahtimes24

পর্নগ্রাফি আসক্তি থেকে বাঁচার উপায়ঃ ( পর্ব ২)

পর্ণ আসক্তির লক্ষণ সমূহ!

 

কোন ব্যক্তি পর্নগ্রাফিতে  আসক্ত কিনা এটা বোঝার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। অর্থাৎ যার মাধ্যমে বোঝা যায় কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে কিনা। যদি আপনার মধ্যেও এসব লক্ষণ বিদ্যমান থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনি পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত।
চলুন জেনে নেওয়া যাক পর্ণ আসক্তির লক্ষণসমূহ:

১/পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তি সবসময় নিজেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করে।
২/রিলেটিভ,বন্ধু-বান্ধব,কিংবা পরিবারের লোকজনদের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়।
৩/গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে রেখে ও অনেক সময় পর্ণ ভিডিও দেখে নষ্ট করে।
৪/তারা নিজের সময় ও কাজ থেকে পর্ণ দেখাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
৫/বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে পর্নোগ্রাফিকে বেছে নেয়।
৬/পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তি নিজেও বোঝে পর্ন দেখা ঠিক নয় তবুও সে বারবার একই ভুল করে থাকে কারণ সে অভ্যাসের স্বীকার।
৭/স্বাভাবিক যৌন জীবনের ছন্দপতন ঘটে।
৮/অভ্যাসে পরিণত হলে তখন নিয়মিত পর্ন না দেখলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না।
৯/প্রথমে অল্প সময় ও পরে আপনি পর্ণ দেখায় অধিক সময় ব্যয় করবেন।
১০/পর্ণ ভিডিও দেখার ডিভাইসটি সকলের থেকে লুকিয়ে রাখা।
১১/নিজেকে একা ঘরে বন্ধ করে পর্ণ দেখা।
১২/নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে।
১৩/নিয়মিত পর্ণ সাইট ভিজিট, ছবি ও ভিডিও দেখা।
১৪/ব্যবহৃত ডিভাইসের হিস্ট্রি মুছে ফেলা,ও পাসওয়ার্ড পাল্টে ফেলা।
১৫/ওয়াশরুমে মাঝেমধ্যে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করা।

শিশুদের মধ্যে পর্ন দেখার প্রবণতা ও এর থেকে বের হবার উপায়।

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বর্তমানে ইন্টারনেটের ব্যবহার সহজলভ্য হয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ইন্টারনেট যেমন একটি আশীর্বাদের নাম ঠিক তেমনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেই অনেক শিশু-কিশোর আসক্ত হচ্ছে পর্নোগ্রাফিতে। বর্তমান সময়ে শিশু-কিশোরদের মধ্যেও পর্ণ দেখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে যেসকল বাসা-বাড়িতে শিশুরা একা থাকে, বাবা-মা উভয়ই চাকুরিজীবী, মা-বাবার সাথে যেসব শিশুদের সম্পর্ক খারাপ তাদের মধ্যেই মূলত পর্ণ আসক্তি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া পর্ণ আসক্তদের একটি বড় অংশ হলো স্কুলগামী ছেলে-মেয়ে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুলগামী ছেলেদের ৬১.৬৫ শতাংশ পর্ন দেখে ও ৫০.৭৫ শতাংশ ছেলে ইন্টারনেটে পর্ন খোঁজে।

“মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন” পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে রাজধানীর ৭৭ শতাংশ কিশোর পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।

পর্ণ আসক্ত একটি শিশু মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে, অধিক পর্ণ দেখার প্রবণতা একটি শিশুর ভবিষ্যতকে ধ্বংস দিকে ঠেলে দিতে পারে।

যখন আপনার নিষ্পাপ শিশুটি ধীরে ধীরে পর্ণ আসক্ত হয়ে পড়বে তার মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। অনেক বাবা-মা এটি বুঝতে পারেন অনেকেই আবার পারেন না। এতে করে শিশুটির সুন্দর শৈশব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বাবা-মাকে সবসময় সন্তানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ সন্তানের পর্ণ দেখার প্রবণতা সন্তানের ধ্বংসের কারণ।

 

যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার সন্তানের মধ্যে পর্ন দেখার প্রবণতা রয়েছে:

 

১/আপনার চঞ্চল শিশুটি যখন চুপ হয়ে যায়।
২/দেখবেন তখন মা-বাবার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়ে নিজেকে সবসময় একাকিত্বে গুটিয়ে রাখে।
৩/সবসময় নিজেকে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা।
৪/মোবাইল বা ডিভাইস কাঁথা বা কম্বলের নিচে লুকিয়ে ব্যবহার করবে ও রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার করবে।
৫/বন্ধু-বান্ধব দের সাথে খেলতে না চাওয়া ও খেলার প্রতি অমনোযোগী প্রকাশ করা।
৬/নিজেকে সর্বদা ঘরে বন্দী করে রাখা।
৭/আপনি যদি মাঝেমধ্যে হটাৎ করে তার ঘরে ঢুকলেই সে চমকে যাবে ও তার মধ্যে অস্বাভাবিক নড়াচড়া দেখা যাবে।
৮/পড়াশুনায় অমনোযোগী।
৯/মেজাজ খিটখেটে হয়ে যাওয়া।
১০/যখন দেখবেন আপনার সন্তান আগের থেকে  ওয়াশরুমে দীর্ঘসময় কাটায় ও ফোন নিয়ে যায়।
১১/শিশুদের রাত জাগার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া।
১২/হটাৎ করে কেউ ঘরে ঢুকলেই ফোন কিংবা ল্যাপটপটি বন্ধ করে দেওয়া ও আতঙ্কিত হয়ে পড়া।
১৩/আপনার সন্তান যখন কোন ডিভাইস ব্যাবহার করে যেমন মোবাইল, কম্পিউটার বা ল্যাপটপের স্ক্রিন এমনভাবে ঘুরিয়ে রাখবে যেনো বাহিরের কেউ তা দেখতে না পারে।

স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা পর্নে এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছে যে তারা ক্লাসেও পর্নোগ্রাফি দেখা শুরু করেছে।দুই হাজার বারো সালের একটি জরিপে দেখা গিয়েছে ৮২% ছেলেমেয়েরা সুযোগ পেলেই মোবাইলে পর্ন দেখে।
বাংলাদেশের একটি জরিপে দেখা যায় ৬২% শিক্ষার্থী ক্লাসে বসেই পর্ণ দেখে”।

 

আচ্ছা তাহলে এবার একটা গল্প শুনি পর্নগ্রাফিতে আসক্তি নিয়ে,
গল্পের নাম- এমন মরণ মাওলা তুমি কাওকে দিও না।

 

ম্যাডাম রায়হানকে কল করে বল্লো,
ম্যাডাম—রায়হান?
রায়হান—জ্বি ম্যাডাম!
ম্যাডাম—তুমি এখন কোথায়?
রায়হান—মসজিদের বাহিরে।
ম্যাডাম—আমাদের বাড়িতে তাড়াতাড়ি এসো।

আমি ম্যাডামের আওয়াজে উৎকণ্ঠা অনুভব করলাম। তিনি আমাদের স্কুলে পড়িয়েছেন, তাই ম্যাডাম ডাকি। রাকিব আবার কিছু করে বসল না তো! রাকিব আমার বন্ধু। অবশ্য হেদায়েত পাওয়ার পর আমাদের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। সে আমাকে একদমই সহ্য করতে পারে না এখন।

মসজিদ থেকে রাকিবদের বাড়ি যেতে প্রায় চার মিনিট লাগে। আমি দ্রুত হাঁটায় আড়াই মিনিটের মাথায় তাদের বাড়ি গিয়ে পৌছুলাম। সেখানে দেখি মিনহাজ আর যুবায়েরও আছে। তারাও রাকিবের বন্ধু।

ম্যাডাম—রায়হান! রাকিবকে অনেক সময় ধরে ডাকছি। কিন্তু তার কোনো সাড়া-শব্দ নেই।
রায়হান—কত সময় আগে বাথরুমে ঢোকেছে।
ম্যাডাম—দুই ঘণ্টারও বেশি।
রায়হান—তাহলে ম্যাডাম দরজা ধাক্কা দিয়ে সিটকিনি ভেঙে ফেলি।

ম্যাডাম সম্মতি দিয়ে আশেপাশের মহিলাদের বাথরুমের দরজা থেকে সরিয়ে নিয়ে একটি রুমে গেলেন। ছিটকিনি খুলতে তেমন সময় লাগল না। ভিতরে যা দেখলাম, তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো না।

আমি রাকিবের অবস্থা দেখে যুবাযেরকে বললাম, দরজায় দাড়িয়ে থাকতে। তার শরীরে কোনো কাপড় নেই। শরমগাহে হাত রাখা। নিচে মোবাইল পড়ে আছে। আমি তার নাকের কাছে আঙ্গুল রেখে দেখলাম শ্বাস বন্ধ। পরে হাতের কব্জি  চেক করলাম, ‘না! রাকিব আর বেঁচে নেই।’ মিনহাজ নিচ থেকে মোবাইল তোলে বলল, ‘ভাই! পর্ন ভিডিও!’

আমার সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘোরাল। চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। আওয়াজ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করল। নিজেকে কোনোভাবে সামলে রাকিবের মোবাইল মিনহাজের কাছ থেকে নিয়ে পকেটে ঢোকালাম। কাপড় পড়িয়ে তাকে বাহিরে নিয়ে এলাম। মহিলাদের কান্নার রোল পড়ে গেছে। ম্যাডামকে দেখলাম কোনো প্রতিক্রিয়া করছেন না। ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। কথায় আছে, ‘অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর।’ ম্যাডামের অবস্থাও ঠিক তাই। ম্যাডাম যেন নিজের চোখ,কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। আমি বাহিরে বেড়িয়ে এলাম।

এশার নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হলাম। রাকিবের দাফন কবে হবে , তা এখনো ঠিক হয় নি। আংকেল (রাকিবের বাবা) দেশে আসার পর দাফন হবে। তিনি আগামীকাল যুহরের আগেই চলে আসবেন।

মিনহাজকে দেখলাম মসজিদের বৈঠকখানায় বসে কাঁদছে। সেজদাতেও কান্না করেছে। যুবায়ের এখনও মসজিদে থেকে বের হয় নি।

এখন রাত প্রায় দুইটা। সহসা শিয়ালের ডাকের আওয়াজ শোনা গেল। দূরে কোথা
থেকে নাম না জানা ফুলের সুবাস সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। কুয়াশায় দূরের কিছু দেখা যাচ্ছে না, তবে দূর থেকে ভেসে আসা একটি আওয়াজ শোনা যাচ্ছে,

“এমন মরণ মওলা তুমি কাওকে দিও না।”

Leave a Comment