জামাতের ভুল সিদ্ধান্ত, শক্তিশালী হতে পারে আওয়ামী-লীগ।
জমাতে ইসলামী ৫ই আগস্টের পর জমাত বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে তার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে কম প্রাসঙ্গিক বা কম প্রাসঙ্গিক করার একটা প্রয়াস নেয়। যে কারণে লক্ষ্য করবেন যে, জমাত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দীর্ঘস্থায়ী হউক এমনটাই চেয়েছিলো শুরুতে ; বিএনপি দ্রুততম সময়ে নির্বাচন।
কিন্তু, বৈষম্যবিরোধীদের একটা অংশ তাতে রাজি হয় নি এবং তারা নিজেদের মতো একটি রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলো। যদিও দল সংগঠন করতে তারা যথেষ্ট দেরি করে ফেলেছে।
এই যে বৈষম্য এবং জমাত-শিবির দ্বন্দ্ব এরই পরিপ্রেক্ষিতে সমন্বয়কদের কম পরিচিত শ্লোগান পোস্ট। তুমিও নও, আমিও নই রাজাকার রাজাকার, তুই রাজাকার তুই রাজাকার।
আবার, সাদিক কাইয়ূমের আবির্ভাব রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বৈষম্যবিরোধীদের আড়াল করে ফেলে দুর্গাপূজার আগ পর্যন্ত।
অর্থাৎ, জমাত ৫ই আগস্টের পরের এক মাস বিএনপির সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে এবং পরের তিন সপ্তাহে সম্পর্ক নষ্ট করে বৈষম্য বিরোধীদের সাথে।
এখন যেকোনো দল তার রাজনৈতিক “স্বার্থ” বিবেচনায় যেকোনো স্ট্রাটেজি নিতেই পারে। কিন্তু, তাতে অর্ডিনারি রাজনৈতিক প্রুডেন্স থাকা জরুরী।
(১) “অস্বাভাবিক” কিছু না হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এইটা মোটামুটি নিশ্চিত। এবং
(২) বৈষম্যবিরোধীদের একটা ক্লিন ইমেজ ছিলো/আছে এবং সে জায়গা থেকে তাদের রাজনৈতিক সম্ভাবনাও ছিলো এবং আছে। তারা সেই জায়গা থেকে রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করবে এইটাও খুব স্বাভাবিক।
দুইটি স্বাভাবিক বিষয়কে জমাত মেনে নিতে পারে নাই এবং এই দুইটি স্বাভাবিক বিষয়কে নাকচ করতে গিয়েই সে ভুল উদ্যোগ নিয়েছে এবং নিষ্ফল হয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু, মাঝখান থেকে বিএনপি এবং বৈষম্য উভয়ের সাথেই সম্পর্ক নষ্ট করেছে।
দুইটি প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার পর জমাতের প্রস্তাব পি আর সিস্টেম। নিঃসন্দেহে পি আর সিস্টেমে বিএনপির সংসদীয় আসন কমবে। ফলশ্রুতিতে, রাজনৈতিক প্রভাব কমবে তুলনামূলক (এইটা নাও হতে পারে)। আবার, জমাতের সংসদীয় আসন বাড়বে। ফলশ্রুতিতে, জমাতের রাজনৈতিক প্রভাব বাড়বে (এইটা নাও হইতে পারে) ।
কিন্তু, একইসাথে পি আর সিস্টেমের ফলে আওয়ামী লীগ বা তার সমর্থিত শক্তির ফিরে আসার সম্ভাবনাও বাড়বে। সেটা কীভাবে? বর্তমান বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থেকে ১ ভোট বেশি পাইলেই আপনি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য। ধরি, গড়পড়তা একটা ইলেক্টোরাল কনস্টিটিউন্সিতে ৫ লাখ ভোটার থাকে। ৪ লাখ ভোট কাস্ট হয়। যিনি জিতেন ২,১০,০০০, হারেন ১.৮০,০০০ ভোট পান। বাকি ১০,০০০ অন্যরা পায়। এর মধ্যে প্রধান দুই দলের ফিক্সড ভোটার থাকে ১৪০০০০+ ১,২০,০০০। জোটের ভোট ৩০/৪০,০০০। বাকি, ১ লাখ বা ১.১০,০০০ সুইং ভোট। যেইটা ৮০/২০ অনুপাতে শিফট হয়। জয়ী দল ৮০% বা তারও বেশি ভোট পেয়ে আসনটি জিতে নেয়। এর বাইরে দুর্গটাইপ আসন থাকে (৫০/৬০)*২ টি। বাকি ১৮০ আসনেই মূলত মূল খেলা হয়।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের অপশাসনের পর তার ভোটসংখ্যা ২,২০,০০০/১,৮০,০০০ থেকে কমে ১ লাখ বা ৯০ হাজারেই মনে করেন নেমে আসলো। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই ৯০ হাজারে আসলে কোনো ভ্যালু নাই। এই ৯০ হাজার টু ১ লাখ ২০ হাজারের কোনো ভ্যালু নাই। ভালো লাগুক না লাগুক এখন বলা যায় যে, আগামী ১০ বছর বা তারও বেশি সময়ের জন্য দেশ গণতান্ত্রিকভাবে ওয়ান পার্টি স্টেট হয়ে যাবে। যখন বাংলাদেশের রাজনীতি দ্বি-দলীয় ছিলো তখন ১০-১৫-৩০ হাজার সমর্থন থাকা দলেরও যে ভ্যালু ছিলো ; এখন ৯০ হাজার, ১ লাখ ২০ হাজার ওয়ালা দলেরও সেই ভ্যালু নাই। আওয়ামী লীগের লোকজনও সেইটা বুঝেন। তাই বিদ্যমান ইলেকটোরাল সিস্টেমে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাদের ভোট বিএনপি এবং জমাতে শিফট করতেন। যে এরিয়ায় যে দল শক্তিশালী তার কাছে ৮০/২০ অনুপাতে ভোট শিফট হইতো। বিনিময়ে লোকাল আওয়ামী লীগাররা জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তা চাইতেন।
কিন্তু, জমাতিদের প্রস্তাবনায় পি আর সিস্টেম কার্যকর হলে এই ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার বা ক্ষেত্রবিশেষে ১লাখ ৫০ হাজার ভোটের ভ্যালু ক্রিয়েট হবে এবং ভোট শিফট হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। এখন আওয়ামী লীগ মাঠ কামড়ে পড়ে থেকে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার বা কম বেশি ভোট নিজের ঝোলায় ঢুকাতে পারলে আনুপাতিকভাবে ৬০-৬৫-৭৫ সীট বের করা তাদের জন্য কষ্টকর হবে না। বর্তমান সরকারকে লোক দেখানো হলেও একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। কোনো “ক্রিমিনাল ” এক্টিভিটিজ বা “মানবতাবিরোধী” অপরাধে যুক্ত নন এমন সব মাঠের আওয়ামী লীগারদের ফাংশন করতে দিতে হবে। পাশাপাশি সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো যাদের ইন্টারন্যাশনাল লবি আছে তারাও মুক্তভাবেই মাঠে নেমে পড়ার সুযোগ আছে।
যেহেতু, এ সরকার রাজনৈতিক সরকার নয়, সুশীল সরকার সেহেতু তারা দৃশ্যমান কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। আবার, ১/১১ তে যেমন বিএনপি-জামাত যেনো ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে বিষয়ে যেমন আমেরিকা-ভারত-সুশীল- আওয়ামী ঐক্য হয়েছিলো ঠিক তেমনি বিএনপি যেনো এবস্যুলুট ক্ষমতা না পায় সেজন্য ভারত-সুশীল-জমাত-আওয়ামী ঐক্য হচ্ছে এবার। জমাত কি এই সিচুয়েশনটা
বুঝতে পারতেসে? এবং সুশীলরা এইটাও নিশ্চিত করবে জমাত যেনো প্রধান বিরোধী দল না হইতে পারে।
বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকশন হইলে জমাত ২০-২৫ টা আসন পেয়েই বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো বিপরীতে বিএনপির এবস্যুলুট মেজোরেটি। ২৫০-৭০। কারণ, এই অল্প সময়ে অপর কোনো দল সংগঠন, রাজনীতি,ন্যারেটিভ গুছায় উঠতে পারবে না। এমনকি আওয়ামী লীগও পারবে না তার কিছু পকেট ব্যতীত।
এখন আপনি বলতে পারেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ কইরে দেবানে। নিষিদ্ধ কইরে দিলে আওয়ামী লীগের জন্য আরও ভালো। সে অন্য নামে মাঠে আসবে ; আওয়ামী লীগের কালিমা মুছে। ঐ দলরে নিবন্ধন দিবেন না ; মাঠে নামতে দিবেন না ; ওরা সিপিবি- বাসদের উপর ভর করে নামবে। ইন্ডিয়া তাদের যাবতীয় (ট্যাকা,আইডিয়া, লোকবল,ন্যারেটিভ ) সাপোর্ট দিবে। নেতা হবে সিপিবির, সংগঠন, কর্মী থাকবে আওয়ামী লীগের। ব্যাকাপে থাকবে সুশীল আর ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ার বিশ্বস্ত মিত্র আওয়ামী আর বাম। ইন্ডিয়া বিএনপিরেও বিশ্বাস করে না। এখন সম্পর্ক করতে চায় বাটে পইড়া। আফগানিস্তানে ইন্ডিয়া তালেবানকেও সমর্থন করতো না। যখন তালেবান ক্ষমতা দখল করলো তখন রিয়েলিটি মাইনে নিয়ে তালেবানের সাথেও সম্পর্ক করেছে। এখন্ব তারা রিয়েলিটি মাইনে নিয়েই বিএনপিরে পাত্তা দিতেসে। জমাত অফার করার পরও পাত্তা দেয় নাই। যেহেতু, রিয়েল্টি জমাতের পক্ষে না। তবে যদি কখনোও জমাতও আসে পাওয়ারে ; ইন্ডিয়া রিয়েল্টি মাইনে নিবে।
আর বিএনপিও বুঝবে ক্ষমতা নির্বিঘ্ন করতে ইন্ডিয়ারে বিএনপির লাগবে। ইন্ডিয়ারে ঘাঁটায়ে বিএনপির লাভ নাই বরং ক্ষতি। এই যে, কয়েকদিনের মধ্যে এতোগুলো জাহাজে আগুন/বিস্ফোরণ হইলো এগুলা কী এমনি এমনি? হাসিনার আমলেও এরকম কিছু স্যাবোটাজ কইরা হাসিনারে বাগে আনসিলো ইন্ডিয়া। করোনাকালীন সময়ে ; ১৮ এরপরে যখন চাইনিজ বলয়ে বাংলাদেশ ঢুকতে চাইসিলো।
রিয়েলিটি মাইনে নিতে পারা রাজনৈতিক দলের জন্য অনেক ম্যাচুরিটির পরিচয়। জমাত রিয়েলিটি মাইনে মাইনে নিতে পারে নাই। আগেও না ; এখনও না। ৭১,৭৯,৯৬,২০০৭-০৮,০৯-২৩, ২৪য়েও না । জমাত যদি ৫ই আগস্টের পর বিএনপিকে গিয়ে কইতো, “অস্বাভাবিক ” কিছু না হইলে তুমিই তো পাওয়ারে আসবা। আমরা দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত মিত্র। ঐক্যফ্রন্টও বিট্রে করছে ; আমরা তো করি নাই। বামরাও কখনো বিশ্বস্ত মিত্র হবে না ; ইন্ডিয়া গেইম খেলবে । যখন দূরে যাইতে কইসো গেছি, যখন কাছে আইতে কইসো আসছি। এখন আমার দাবি হইলো, রাষ্ট্রে এই এই জায়গায় ইসলামাইজেশন (শরীয়া না) করতে হবে ; ৭১ য়ের আওয়ামী বয়ান/ জমাতবিরোধী বয়ান লইয়া লাড়াচাড়া দিবা না। তাইলে সবগুলো না রাখলেও মেজরগুলা রাখতো।
বিপরীতে, বিএনপির তৃণমূল যেহেতু লুটপাট করবেই সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরী হবে আস্তে আস্তে। ৫ বছর পরে না হইলেও ১০/১৫/২০ বছর পরে হইলেও। সেই জায়গায় যদি বৈষম্যরে সময়ে এবং অসময়ে ব্যাকাপ & ট্রাবল দিয়া টিকায়ে রাখতো তাইলে যথাসময়ে (১০/১৫/২০) এই ব্যাকাপ কাজে দিতো। এখন ট্রাবল দিসে ; আবার ব্যাকাপ দেওয়ারও সুযোগ আছে। পলিটিক্স ইজ আর্ট অফ কম্প্রোমাইজ।